কলেজের প্রথম বোর্ড পরীক্ষা চলছে। ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে
প্রিন্সিপালের মাথা ব্যাথা অনেক বেশি। কেন্দ্র ঠিকঠাকমত সুবিধাজনক কলেজে
পরছে কিনা খবর রাখতে হয়েছে। পাছে আবার সরকারি কলেজের টীচারেরা কড়া গার্ড
দেয়, তাই গভর্নিং বডিকে হাত করতে ফান্ড থেকে বেশকিছু পয়সা গচ্চা গেছে।
খাতাপত্র কোনদিকে যাচ্ছে তার খবর রাখতে মতিন দৌড়াদৌড়ি করছে। মে মাসের মাথা
গলিয়ে দেয়া রোদ সহ্য করে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন আফসার সাহেব।
ফিজিক্স আর একাউন্টিং পরীক্ষার আগে সপ্তাখানেক বন্ধ পাওয়া গেলে স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেললেন। এই কদিন স্কুলে এসে আরামসে নিজের রুমে বসে কড়া লিকারের চা
খাবেন আর তালাবদ্ধ ড্রয়ার থেকে বের করে অশ্লীল ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাবেন।
মাঝে মাঝে পেছনের জানালার পর্দা সরিয়ে চুপিচুপি মালীর মেয়েটা গোসল করতে
আসে কিনা খোঁজ রাখবেন।
এর মধ্যে একদিন আরাম করে বিশাল নরম চেয়ারে গা ডুবিয়ে দিয়েছেন, এমন সময় পিওন ছেলেটা এসে দরজায় টোকা দিল,
- কে?
- স্যার, আমি, রতন।
- হ্যাঁ, ডিস্টার্ব করতে না মানা করলাম।
স্পষ্ট বিরক্তি আফসার সাহেবের মুখে।
- সরি স্যার। কিন্তু একজন দেখা করতে আসছে, বলতেছে আর্জেন্ট।
- এপয়নম্যান্ট আছে?
- না স্যার, কিন্তু উনি এক্স কমিটিতে ছিলেন।
- কে?
চোখ সরু হল তার। কে হতে পারে ভাবছেন তিনি।
- শিরিন আপা, ঐযে, একটা ছেলে আছে। এইখানেই পড়ে। ডেইলি নিয়া আসে, নিয়া যায়।
বেশ কয়েকমাস হয়ে গেছে শেষ যেদিন মহিলাকে দেখেছিলেন। মনে করতে কয়েক মুহূর্ত সময় লাগল। মনে পরতেই ধক করে উঠল বুকের বাঁ পাশটা।
- কি সমস্যা?
- কথা বলতে চায়। আমারে বলেনাই।
- আসতে বল।
মহিলা কেন তার সাথে দেখা করতে চাইতে পারে তা ঠাহর করতে পারলেন না আফসার
সাহেব। নিজেকে টনেটুনে সোজা করে মুখে গম্ভীর হাসিখুশি ভাব আনতে চেষ্টা
করলেন। মিনিটখানেক পর দরজায় উঁকি দিল একটা মুখ,
- স্যার, আসবো?
সাধাসিধে, চশমা পরা সেই মুখ। তবে বর্তমানে যতটা না কঠিন তার চাইতে বেশি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ বলে মনে হল।
- হু, আসুন, প্লীজ বসুন।
- আমি শিরিন আক্তার। আপনি চেনেন কিনা ঠিক জানিনা। বাট বেশ কয়েকবছর স্কুল কমিটিতে ছিলাম
- হ্যাঁ, অফকোর্স। আপনাকে কে না চেনে। আমি তখন পদে ছিলামনা বলে সম্ভবত আপনার সাথে কথা হয়নাই।
- আ, হ্যাঁ, তাই হবে।
নার্ভাস ভঙ্গিতে হাসলেন মহিলা।
একথা সেকথার পর আসল কথায় আসলেন আফসার সাহেব। ঠিক কি দরকারে একান্তে দেখা করতে চান এই মহিলা?
উত্তরটা খুব অপ্রত্যাশিত আর একাধারে সুবিধাজনক।
- ওহহো, এমন হল কেন?
জিজ্ঞাস করলেন প্রিন্সিপাল।
- আসলে স্যার তুমনের শরীরটা খারাপ ছিল এক্সামের সময়।এমনিতেই ও পড়াশোনায় কিছুটা দুর্বল। তার ওপর এই সমস্যায়.....
- হুম, আচ্ছা, আমি ওর মার্কশীটটা দেখি।
রতনকে ডেকে শিরিন আপার ছেলে তুমনের রেজাল্ট শীটটা আনিয়ে দেখতে লাগলেন আফসার
সাহেব। একবার চোখ বুলিয়েই বুঝে গেলেন কোন গবেটের জন্যে সুপারিশ করতে
এসেছেন এই মহিলা।
এরকম বিদুষী নারীর এই জাতের ভোদাই ছেলে কিভাবে হয়! গত বছরেও উপরের সুপারিশে
পাশ করিয়ে দেয়া হয়েছিল। এবার সে ক্লাস ফাইভে। বরাবরের মতই প্রথম পার্বিকে
ডাব্বা মেরেছে। বছরের মাঝখানে পড়াশোনার কারণে টিসি দেয়ার ক্ষেত্রে খুব
সতর্ক থাকেন আফসার সাহেব। নিজে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিশ্চিত করেন নূন্যতম
সুযোগ দেয়া যায় কিনা। এই গবেট সেক্ষেত্রে কোন সুযোগ পাওয়ার দাবি রাখেনা।
বাংলা, ইংরেজি, সমাজ বিজ্ঞান তাও একটা পর্যায়ে আছে। ম্যাথে একেবারে গোলআলু।
ধর্মের অধর্ম করে ফেলেছে যা মনে চায় তাই লিখে।
- আই অ্যাম সরি ম্যাডাম, কিন্তু ওর অবস্থা এত শোচনীয় যে আমি কি করতে পারি বুঝতে পারছিনা।
- প্লীজ স্যার, অন্তত এই বছরটা চালিয়ে নিতেই হবে।
- দেখুন ম্যাম, ওকে স্পেশাল কেয়ার নেবে এরকম প্রাইভেটে দিন। জেলা স্কুলে ওর পড়াশনাই হবেনা। ওর আসলেই স্পেশাল কেয়ার দরকার।
- সেটা আমিও বুঝতে পারছি স্যার। বাট এই বছরটা না চালাতে পারলে খুব প্রবলেম
হয়ে যাবে। ওর বাবা আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে। ব্যবসার কাজে ঢাকা থেকে আসতে
পারছেনা ঠিকই কিন্তু ফোন করে ছেলেকে শাশাচ্ছে। বাসায় এসেই পিঠের চামড়া খুলে
নেবে বলে। তুমনের খাওয়া দাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
বাপটা নিশ্চয়ই আস্ত হাঁদা। পয়সা থাকলেই সুন্দরী বউ পাওয়া যায় রসগোল্লার মত।
ঐ ব্যাটার মাথার গোবরই নিশ্চয়ই ছেলের মাথায় জায়গা করে নিয়েছে। ঢাকায় বসে
কার বাল ছেঁড়ে কে জানে!
আফসার সাহেব মহিলাকে যতই বোঝানোর চেষ্টা করেন তার পক্ষে হস্তক্ষেপ করা কতটা অসম্ভব ততই মহিলা মরিয়া হয়ে ওঠেন।
শেষে একেবারে উৎকোচের প্রস্তাবই দিয়ে বসলেন শিরিন আপা।
- দেখুন ম্যাডাম, মানি ক্যান্ট বাই এভরিথিং। এই কাজ করাটা আমার জন্যে খুব অসুবিধার হতে পারে।
- স্যার, আপনি চাইলে কেউ কিছু বলতে পারবেনা। এমাউন্ট নিয়ে কোন আপত্তি আমি করবনা।
টাকার নেশা বহু আগেই কেটে গেছে আফসার সাহেবের। তাই এই প্রস্তাবে গা করলেন
না তিনি। তবে মহিলার বেপরোয়া ভাব দেখে একটা দুর্ধর্ষ আইডিয়া এল মাথায়। যদিও
এযাবৎ কালে এতটা ঝুঁকি নেননি কখনো, তবু সব কিছুরই তো শুরু আছে!
- দেখেন, শিরিন আপা, পয়সা নিয়ে কাজ করা আমার ধাতে নাই। জাস্ট আপনি বলছেন
বলে আমি ট্রাই করতে পারি। তবে নিশ্চয়তা দিতে গেলে খুব হার্ড হয়ে যাবে।
- প্লীজ গিভ মি শিওরিটি এন্ড আই'ল গিভ হোয়াটেভার ইট টেকস।
আকুতি ঝরে পরছে তার কন্ঠে।
- দ্যান ইট উইল টেক মোর দ্যান ইওর থট।
- কি চাচ্ছেন আপনি?
আশান্বিত দেখালো শিরিন আপাকে।
- দেখুন, এটা আমার ডিমান্ড। রাজি হওয়া না হওয়া আপনার ব্যাপার - আমি আপনার সাথে একান্তে কিছু সময় কাটাতে চাইছি।
- মানে?
ভ্র কুঁচকে গেল মহিলার।
- একজন পুরুষ একজন নারীর সাথে একান্তে কিছু সময় কাটাতে চাওয়ার মানেটা মনে হয় আপনি বোঝেন
কাঁপা গলায় কিন্তু জোর দিয়ে বললেন আফসার সাহেব।
কয়েক মুহূর্ত অবাক হয়ে স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন শিরিন আপা। তারপরই হঠাৎ মুখ লুকালেন লাল ওড়নায়।
চমকটা কেটে যেতেই ধমকে উঠলেন,
- বেয়াদব কোথাকার, তুই জানিস আমি কে? আমার হাজবেন্ডকে একটা ফোন করলে তোর কি অবস্থা হবে জানিস তুই?
- মাথা ঠান্ডা করুন ম্যাম। আমি আগেই বলেছি এটা জাস্ট আমার ডিমান্ড। আপনার
খারাপ লাগলে আসতে পারেন। কথাটা ভুলে যান। আপনার কাছে একটা ছোট্ট আবদার
করেছি রিস্কি একটা কাজের জন্যে। ক্লাস ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষায় একটা
স্টুডেন্ট খারাপ করলে পুরো কমিটিকে সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কমিটির
ফাইনাল করা ডিসিশানের বিরুদ্ধে আমার একার কথা বলতে হবে। আপনার হাজবেন্ড
আমার যা ইচ্ছা করতে পারেন বাট আপনার ছেলের টিসি অর্ডার উইথড্র করাতে
পারবেনা। আপনার যদি কাজটা খুব খারাপ মনে হয়, প্লীজ লীভ।
গলা বহুকষ্টে স্বাভাবিক রেখে কথাগুলো বললেন আফসার সাহেব। ইমোশোনাল
ব্ল্যাকমেলের ডোজটা ভালই হয়েছে। আর গলা চড়ছেনা রগচটা মহিলার। ভেঙে ভেঙে
বললেন,
- কি করতে চান?
- দেখুন, আপনি একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মহিলা। কি কি করতে চাইতে পারি তা আর বলার প্রয়োজন আছে কি?
- ব্ল্যাকমেলটা কতদিন চলবে?
- ম্যাম, আপনি আবার নেগেটিভলি নিচ্ছেন। এটা মোটেও ব্ল্যাকমেল নয়। শুধু একদিন আপনার কিছুটা সময় নষ্ট করব।
- তুমনের বাবার সাথে আমার মাস দুয়েক কোন ফিজিক্যাল রিলেশন নেই।
- সেটার সমস্যা হবেনা। প্রোটেকশানের ব্যবস্থা করা যাবে। আপনি এনজয় করবেন আই হোপ।
বলে নিজের চেয়ার থেকে উঠে টেবিলের অপর পাশে মহিলার কাছে এসে গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন তিনি।
- আচ্ছা, আমি ডিসিশান নিয়ে আপনাকে জানাব।
ধরা গলায় কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়ালেন শিরিন আপা।
খসখস করে নিজের নাম্বারটা লিখে প্যাডের পাতা ছিঁড়ে তার হাতে দিলেন আফসার সাহেব।
- আজ রাতের মধ্যেই জানান। দুদিন পরে আবার আমার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে।
সেদিকে একঝলক তাকিয়ে হাতের মুঠোয় নিয়ে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলেন শিরিন আপা।
চেয়ার থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়ে দু কদম বাড়াতেই খপ করে পাছায় বড় করে একটা মুঠ
দিইয়ে চেপে দিলেন আফসার সাহেব। নরম তুলতুলে মাংসে হাত ডেবে গেল। সেকেন্ড
দুয়েক স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মহিলা। তারপর মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেল ভেজানো
কাঠের দরজা ঠেলে।
***************
শেষ পর্যন্ত এত ভালয় ভালয় মিটে যাবে ভাবতেও পারেননি
প্রিন্সিপাল সাহেব। মাগী আসলে যত গর্জে তত বর্ষে না। তবুও ডজনখানেক গাল
খেতে হয়েছে। বিস্তর তুই তোকারি করেছে শিরিন। মনে পড়তেই দাঁত কিড়মিড় করে
উঠছে তার। অসুবিধা নাই, শোধ ভালমতই তোলা হবে। শিরিনের কথা বাদ দিয়ে ছেলেটার
টিসি কিভাবে আটকাবেন তা নিয়ে ভাবতে চান এই মুহূর্তে।
-- আমি চাইলে এইটা তেমন কোন প্রব্লেম হবেনা। বাট কমিটির বুড়ো হাবড়াগুলো
নিশ্চয়ই নানা ধরণের জল্পনা কল্পনা করে বসবে। তার চেয়ে বরং জেলা শিক্ষা
অফিসে প্রথমে টিসি পাঠিয়ে আলীমকে দিয়ে সেটা ক্যান্সেল করিয়ে নিলে....
ধ্যাত, ওই হারামজাদাকে টেরে পেতে দেয়া যাবেনা। ব্যাটা আঞ্জুম মিসের কামের
বেটিকেও ছাড়েনাই। সমস্যাটা নিজেকেই ট্যাকেল দিতে হবে।
****************
বেশ কয়েকবার রিং হবার পর ঘুম ভাঙল আফসার সাহেবের। বালিশের নিচ মোবাইলটা
নিয়ে প্রথমেই ঘড়ির দিকে তাকালেন। রাত সাড়ে তিনটা। এত রাতে অপরিচিত
নাম্বারটা কার হতে পারে! একবার পাশ ফিরে দেখলেন শায়লা মরার মত হাঁ করে
ঘুমাচ্ছে। সতর্কভাবে পা ফেলে ব্যালকনিতে এসে ফোন রিসিভ করলেন।
ওপাশ থেকে নার্ভাস নারীকন্ঠ শোনা গেল,
- হ্যালো, মিস্টার আফসার?
- কে বলছেন? রাত কয়টা বাজে দেখছেন?
- আমি, শিরিন আক্তার। আজকে দেখা করেছিলাম।
এবারে বুঝতে পেরে দাঁতে জিভ কাটলেন আফসার সাহেব।
- ওহ, হ্যাঁ, বলুন ম্যাডাম। কি ডিসাইড করলেন?
- উমম, আপনি আজকের মধ্যে জানাতে বলেছেন বলেই এত রাতে ফোন করলাম। সারারাত ভাবার পর ডিসিশান নিলাম।
- হু
- আমি কবে আসবো? কোথায়? কতক্ষণ সময় লাগবে বলে দেন।
- ডিসিশান যখন নিয়েই ফেলেছেন তাহলে টাইম ওয়েস্ট করে লাভ নাই। কাল ফ্রাইডে,
স্কুল বন্ধ। আপনি দশটার দিকে চলে আসুন। দুপরের আগেই ছেড়ে দেব।
- স্কুলে?
- অ্যাঁ, হাঁ, আমাকে শহরে বহুলোকে চেনে। একসাথে দেখে ফেললে আপনারো সমস্যা হতে পারে। তার চাইতে স্কুলেই চলে আসুন।
- কিন্তু, তবু, আই মিন, অফ ডে তে আমি গেলে কারো সন্দেহ হবেনা?
- না, সেই ভয় নাই। শুধু দাড়োয়ান আছে। গেটে বসে থাকে, সন্ধ্যা হলে তালা মেরে চলে যায়।
- রাতে কেউ থাকেনা?
- নাহ, এলাকার সিকিউরিটি গার্ড আছে, স্কুলে আলাদা কেউ থাকেনা।
- সরি, স্যার, বাট রাতে যদি কেউ না থাকে তবে সেই টাইমটা নিলে ভাল হয়
- ওকে, আপনি যা বলেন। এন্ড আর একটা রিকোয়েস্ট।
- জ্বী, বলুন
- আপনি মাঝে মাঝে একসেট ব্লু সালোয়ার কামিজ পড়ে স্কুলে আসেন। কাইন্ডলি সেটা পড়ে আসবেন?
- আহ, আচ্ছা, তাই হবে।
- ওকে, রাখুন তাহলে
*********
শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেলে রাখা কাজগুলো করে রাখলেন আফসার
সাহেব। সেইসাথে আসন্ন রাতের পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক করে নিলেন নিখুঁতভাবে।
দাড়োয়ানকে আকাশ কালো হবার আগেই ছুটি দিয়ে দিলেন। বলে দিলেন, আজ রাতে একটু
বেশি সময় স্কুলে থাকবেন। ফেলে রাখা কাজ গুলো সেরে ফেলতে হবে।
বিশাল গেটের পেছনে দাঁড়িয়ে উজ্জ্বল ফ্লাডলাইটের আলোয় হাতঘড়ি দেখছেন।
চিন্তার ভ্রুকূটিগুলো বেড়ে চলেছে। শিরিন আপার আসার সময় হয়ে গেছে। এখনো
কাজটা কোথায় সম্পন্ন করবেন তা-ই ঠিক করতে পারেননি। আজকে কোয়ার্টারে
কর্মচারীরা আছে, সেখানে মেয়েমানুষ নিয়ে গেলে ইজ্জ্বত থাকবেনা। ভাবনায় ছেদ
পড়ল গাড়ির তীক্ষ্ম হর্ণের শব্দে। বিশাল গেটের মধ্যে ছোট পকেট গেটখানি হাট
করে খোলা। সেখান দিয়ে হেডলাইটের আলো স্কুলের মাঠে এসে পড়ছে। কয়েক মুহূর্ত
পর পাকা বাহির বারান্দায় ঠক ঠক শব্দ শুনতে পেয়ে বোঝা গেল, আগন্তক একজন
মহিলা। গাড়ির আলো নিভে যেতেই শব্দ দূরে মিলিয়ে গেল। আফসার সাহেব একটু
পিছিয়ে গিয়ে বারান্দায় রাখা প্লাস্টিকের চেয়ারে হাসি হাসি মুখ করে বসে
পরলেন।
প্রথমে মনে হল দৃষ্টিভ্রম হয়েছে। বুড়ো চোখদুটোকে বিশ্বাস করতে আজকাল মাঝে
মাঝেই কষ্ট হয়। বায় কয়েক পলক ফেলে নিশ্চিত হলেন, মহিলা এসেছেন ঠিকই - তবে
একা নয়! সাথে আরো একজন আছে। সেও একজন স্ত্রীলোক। ঘটনাটা খুব অবাক করল
প্রিন্সিপাল স্যারকে। অন্ধকার প্যাসেজ বেয়ে বারান্দার কোণে আলোতে আসতেই
দুজনকে চোখে পড়ল। বামে ছোটখাট শিরিন আক্তার, পরনে সেই নীল সালোয়ার কামিজ,
নীল সুতোর কাজ করা ওড়না দিয়ে মাথায় প্যাচানো।